Skip to main content

অস্রু রেখেছি জমা

অস্রু রেখেছি জমা 

গতকাল রাতে কাপড়চোপড় গুছিয়ে রাখছি, আজ বাড়ি যাব! আব্বা-আম্মা অনেকবার কল দিছে! তারা জানে আজকেই আমার ক্লাস শেষ, এজন্য ! 

আজকে(বৃহস্পতিবার) সকালে টিউশনির বেতন দেওয়ার কথা ছিল, গত মাসেরটা দেয় নাই, গত মাসের আর এই মাসেরটা মিলিয়ে আট হাজারের মত  টাকা, আর যদি ঈদ বোনাস কিছু বাড়িয়ে দেয় ! 

মনে মনে একটা সুন্দর প্লান করছিলাম। এইগুলোই আমার কষ্টের প্রথম টাকা হবে । আর সে টাকা দিয়ে আব্বা আম্মার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাব । আব্বার জন্য একটা পাঞ্জাবী, আম্মার জন্য একটা জামদানি শাড়ি।  

আমার মত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা একটা সময়ের পর বাবার কাছে টাকা চাইতে পারে না, বাব- মার কষ্ট দেখে তাদেরও কষ্ট লাগে, তখন টাকা চাইতেও লজ্জা লাগে । যাইহোক, এই রকম একটা পরিকল্পনা ছিল, আজকে টিউশনির বেতন পেয়ে এইসব কিছু কিনে নিয়ে আব্বা আম্মাকে সারপ্রাইজ দিব! 

সকালে স্টুডেন্ট এর আম্মা কল দিয়ে জানাইছে,  "রাব্বী, এই মাসের টাকাটা ঈদের পর নিও, সামনে বড় ঈদ তো  তোমার আঙ্কেল যা বেতন পাইছে শপিং আর কোরবানি জন্য সেটা লাগবে, কিছু মনে কইরো না, ঈদের পর তোমাকে বাড়িয়ে দিব" ।

এইটা কথাটা শোনার পর শরীরের রক্ত একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে, ঘুম থেকে ওঠার মত শক্তি পাইতেছিলাম না !  এই শহরের মানুষ গুলো এমন কেন, সবসময় নিজের স্বার্থের কথাই চিন্তা করে সবসময় । অন্যদের আবেগ, আর কষ্টের দাম দিতে পারে না ।  

এই মাসের বিশ তারিখেই মেসের মিল অফ করে দিয়েছি, টাকা বেশি খরচ হবে এজন্য।  সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠি, যাতে সকালে না খাইতে হয়...এমনে এমনেই দিনগুলো পেরিয়ে গেছে ! 

বিকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে বেসিনে গিয়ে মুখ ধোয়ার সময়ে দেখি চোখ দুইটা লাল হয়ে গেছে  । আব্বা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করছিল কখন যাব, বলছি দিন খারাপ, আগামীকাল আসব....

সন্ধ্যার পর কোনো কারণ ছাড়া অনেকক্ষণ বাইরে একা হাঁটাহাটি করছি, এই রাস্তায় একটা ফ্লাইওভার আছে, ওটাতে উঠে গাড়িগুলোর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম  । এই বয়সটা এত কঠিন কেন, সময় মত আমাদের আশা আকাঙ্খা পূরণ হয় না, যখন পূর্ণ হবে, তখন আর সাধ থাকবে না !

আমার বয়সি অনেক ছেলে-মেয়ে তাদের বাবা-মাকে নিজের টাকায় কত কিছু কিনে দিচ্ছে, পার্ট টাইম চাকরি করছে, নিজের খরচ নিজেই মিটাইতে

 পারছে । .যখন বাবা মার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যায়, তখন তারা কতটা খুশি হয়! 

আমারো সেটা দেখতে ইচ্ছে হইছিল, কিন্তু পারি নাই ! 

আজকে খরেস্রাতা নদীর মত চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে, মনে মনে ভাবতেছি "কবে আমার টাকায় আব্বাকে একটা পাঞ্জাবী কিনে দিতে পারব আর আম্মাকে একটা জামদানি শাড়ি । 


  মোঃ ফজলে রাব্বী 

Popular Posts

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও দার্শনিক ব্যাখ্যা: যুক্তি, দর্শন ও ইসলামের মিলনবিন্দু

  সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও দার্শনিক ব্যাখ্যা: যুক্তি, দর্শন ও ইসলামের মিলনবিন্দু ভূমিকা: সৌন্দর্যের আড়ালে লুকানো সত্তা প্রতিদিন আমরা দেখি—সূর্য নিখুঁত নিয়মে উদিত হয়, সন্ধ্যায় নীরবে অস্ত যায়। শীতের কুয়াশা শেষে আসে বসন্তের ফুলেল সৌরভ, তারপর বৃষ্টি ছুঁয়ে যায় পল্লীপ্রকৃতিকে। নদী তার নিজস্ব গতিপথ ধরে ছুটে চলে, চাঁদ নির্দিষ্ট নিয়মে রূপ বদলায়, নক্ষত্ররা রাতের আকাশে শোভা বাড়ায়— এ এক অপার সৌন্দর্যের, এক অসাধারণ শৃঙ্খলার জগৎ! কিন্তু এই সৌন্দর্য আর শৃঙ্খলা কি কেবল কাকতালীয়? এত নিখুঁত হিসাব, এত ছন্দময় নিয়ম—এসবের পেছনে কি কেউ নেই? কারো পরিকল্পনা নেই? প্রকৃতির প্রতি যতই গভীর দৃষ্টি দিই, ততই যেন মনে প্রশ্ন জাগে— কে এই অসীম কুশলী কারিগর? তাঁকে তো আমরা চোখে দেখি না, তাঁর কোনো গড়ন নেই, রঙ নেই, আকার নেই। তবে কি এই দেখার অক্ষমতাই আমাদের মনে সন্দেহ জাগায়? তাঁর অস্তিত্ব কি কেবল বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে, নাকি যুক্তির পথেও আমরা তাঁকে অনুভব করতে পারি? এই প্রশ্নগুলোই আজ আমাদের এই চিন্তার যাত্রার সূচনা করে। যেখানে আমরা সন্ধান করব সেই যুক্তির, যা কেবল বিশ্বাসে নয়, যুক্তিবাদী মনেও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা ক...

অনার্স চতুর্থবর্ষের ভাইভা : আমার অভিজ্ঞতা

অঙ্কন : প্রসূন হালদার