Skip to main content

একটি মন খারাপের উপাখ‍্যান

 

ছবি : ইন্টারনেট 

গতকাল রাতে কাপড়চোপড় গুছিয়ে রেখেছিলাম, আজকে বাড়ি যাব। আব্বা-আম্মা কিছুক্ষণ পর পর কল দিচ্ছেন । তারা জানেন আজকেই আমার ক্লাস শেষ, এজন্য । 

আজকে(বৃহস্পতিবার) সকালে টিউশনির বেতন দেওয়ার কথা ছিল, গত মাসেরটা দেয় নি, গত মাসের আর এই মাসেরটা মিলিয়ে আট হাজারের মত  টাকা, আর যদি ঈদ বোনাস কিছু বাড়িয়ে দেয় । 

মনে মনে একটা সুন্দর প্লান করেছিলাম। এইগুলোই আমার কষ্টার্জিত প্রথম কোনো আয় হবে । আর সে টাকা দিয়ে আব্বা-আম্মার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাব । আব্বার জন্য একটা পাঞ্জাবী, আম্মার জন্য একটা জামদানি শাড়ি ।  

আমার মত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা একটা সময়ের পর বাবার কাছে টাকা চাইতে পারে না, বাব- মার কষ্ট দেখে তাদেরও কষ্ট লাগে, তখন টাকা চাইতেও লজ্জা লাগে । যাইহোক, এই রকম একটা পরিকল্পনা ছিল, 'আজকে টিউশনির বেতন পেয়ে এইসব কিছু কিনে নিয়ে আব্বা-আম্মাকে সারপ্রাইজ দিব।

সকালে স্টুডেন্ট এর আম্মা কল দিয়ে জানিয়েছেন,  "রাব্বী, এই মাসের টাকাটা ঈদের পর নিও, সামনে বড় ঈদ তো  তোমার আঙ্কেল যা বেতন পাইছে শপিং আর কোরবানি জন্য সেটা লাগবে, কিছু মনে কইরো না, ঈদের পর তোমাকে বাড়িয়ে দিব" ।

এইটা কথাটা শোনার পর শরীরের রক্ত একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে। ঘুম থেকে ওঠার মত শক্তি পাচ্ছিলাম না। এই শহরের মানুষ গুলো এমন কেন, সবসময় নিজের স্বার্থের কথাই চিন্তা করে  । অন্যদের আবেগ, আর কষ্টের মূল‍্য  দিতে শিখে নি ।  

এই মাসের বিশ তারিখেই মেসের মিল অফ করে দিয়েছি, টাকা বেশি খরচ হবে এজন্য।  সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠি, যাতে সকালে না খাইতে হয়। এভাবেই দিনগুলো পেরিয়ে গেছে।

বিকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে বেসিনে গিয়ে মুখ ধোয়ার সময়ে দেখি চোখ দুইটা লাল হয়ে গেছে  । আব্বা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন কখন যাব, বলছি দিন খারাপ, বৃষ্টি আসতে পারে, আগামীকাল আসব।

সন্ধ্যার পর কোনো কারণ ছাড়া অনেকক্ষণ বাইরে একা হাঁটাহাটি করেছি, এই রাস্তায় একটা ফ্লাইওভার আছে, ওটাতে উঠে গাড়িগুলোর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম  । এই বয়সটা এত কঠিন কেন, সময় মত আমাদের আশা আকাঙ্খা পূরণ হয় না, যখন পূর্ণ হবে, তখন হয়তো আর সাধ থাকবে না। 

আমার বয়সি অনেক ছেলে-মেয়ে তাদের বাবা-মাকে নিজের টাকায় কত কিছু কিনে দিচ্ছে, পার্ট টাইম চাকরি করছে, নিজের খরচ নিজেই মিটাইতে পারছে । যখন বাবা-মা'র জন্য কিছু কিনে নিয়ে যায়, তখন তারা কতটা খুশি হয়! আমারও সেটা দেখতে ইচ্ছে হয়েছিল, কিন্তু পারি নি। 

আজকে খরস্রোতা নদীর মত চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে, মনে মনে ভাবতেছি "কবে আমার টাকায় আব্বাকে একটা পাঞ্জাবী কিনে দিতে পারব আর আম্মাকে একটা জামদানি শাড়ি"। 

"অশ্রু রেখেছি জমা - কবে শেষ হবে কালো দুঃসহ দুঃখের জীবন, 

বুকের জমিনে লেগে থাকে - ঝরে যাওয়া সুবাসহীন ফুলের চুম্বন "।

©️ মোঃ ফজলে রাব্বী 

Popular Posts

অনার্স চতুর্থবর্ষের ভাইভা : আমার অভিজ্ঞতা

অঙ্কন : প্রসূন হালদার

যে আকুতি প্রস্থানের আগে

  বটতলা জামে মসজিদ, ত্রিশাল

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিপথ : উন্নয়ন সম্ভাবনার নানাদিক

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিপথ : উন্নয়ন সম্ভাবনার নানাদিক মোঃ ফজলে রাব্বী

সমস‍্যাটা আসলে কোথায়?

সমস‍্যাটা আসলে কোথায়?  একজন স্টুডেন্ট তার ক‍্যারিয়ার কোথায় গড়তে চায় সেটা কেন কেউ চ‍্যুজ করে দিবে? সে গভমেন্ট জব করবে, উদ‍্যোক্তা হবে, ব‍্যাবসা করবে নাকি অন‍্য কিছু করবে, সেটা তার ব‍্যক্তিগত বিষয় । সে তার সারাউন্ডিংস, অপচ‍্যুনিটি-কস্ট, প‍্যাশন, সামাজিক ব‍‍্যাপার-স‍্যাপার সবকিছু বিবেচনা করে সে সেটা ডিসাইড করবে ।  অথরিটি বা স্টেকহোল্ডার যারা, তাদের কাজ হচ্ছে তার জার্নিতে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখা, তার লাইফের ডিসিশন নেওয়া না । দুইজন মানুষের মাছ খাওয়ার চাহিদা থাকতেই পারে,  এখন সে মাছ নিজে নদী থেকে ধরে নিয়ে আসবে নাকি বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসবে সেটা কিসের উপর নির্ভর করে আপনি জানেন না ।  আপনারা কেন এসব কথা বলছেন সবাই জানি। দেশে গভমেন্ট জব অপচ‍্যুনিটি পর্যাপ্ত না, সেজন‍্য স্টুডেন্টদের দায়ী করবেন? সবাইকে পড়াশুনা করার দরকার নাই,  গ্র‍্যাজুয়েট হওয়ার দরকার নাই, এগুলো দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা। কারো এলাকায় নদী/পুকুর নাই, নদী/পুকুরে ডুবে মরার রিস্ক নাই । তাই বলে সে সাতার শিখবে না?  বাংলাদেশে বসে ইউরোপের প্রেক্ষাপট কল্পনা করে কথা বললে হবে না। এর'চে বরং সমস‍্যা যেখানে, সে বিষয় নিয়ে কথা বলেন । পর্যাপ্ত জব অ