Skip to main content

অনিশ্চয়তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে: জীবনের অর্থ খোঁজার প্যারাডক্সিক্যাল ভাবনা

 


অনিশ্চয়তার ছায়ায় দাঁড়িয়ে: জীবনের অর্থ খোঁজার প্যারাডক্সিক্যাল ভাবনা

জীবন অনেকটা ঠিক সেদিকেই যায়, যেদিকে আমরা ভাবিনি

আমরা প্রতিনিয়ত কত পরিকল্পনা করি, কতো স্বপ্ন দেখি, লক্ষ্যের খসড়া বানাইকিন্তু হঠাৎই কিছু একটা এসে সব ওলটপালট করে দেয় কখনো অসুখ, কখনো পরাজয়, কখনো আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যাওয়াসব মিলে জীবনকে মাঝে মাঝে ধাঁধার মতো মনে হয়

ঠিক তখন মনে হয়, “সবকিছু যদি এত অনিশ্চিত হয়, তাহলে এত কষ্ট করে কী লাভ?”

আমরা হাঁফিয়ে উঠি, হতাশ হই, কিছু না করার মতো এক ধরনের মানসিক অবসাদ আমাদের ঘিরে ফেলে এক মর্মান্তিক টানাপোড়েন

কিন্তু এই হতাশার মধ্যেই আবার অনেক সময় মনে হয়, “জীবন তো অল্প দিনেরএভাবে নষ্ট করে ফেললে তো আর কোনো মানে থাকল না

এই দুই রকম ভাবনাএকদিকে সব ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে, আরেকদিকে নিজের জীবনকে অর্থবহ করে তোলার তাগিদএই দ্বন্দ্বই আমাদের মন আত্মার গভীর প্যারাডক্স এই ভাবনাগুলো একান্তই ব্যক্তিগত মনে হলেও, এগুলো আসলে চিরন্তন মানবজিজ্ঞাসা

 

||  এই প্যারাডক্স কেন আসে?


এই প্যারাডক্স আসলে খুব স্বাভাবিক কারণ মানুষ একমাত্র প্রাণী, যে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করে

আমি কে?”,

 আমি কেন বেঁচে আছি?”,

আমার জীবনের মানে কী?”

 আমরা চাই, আমাদের বেঁচে থাকায় যেন একটা উদ্দেশ্য থাকে, একটা অর্থ থাকে

কিন্তু বাস্তবতা অনেক সময় আমাদের সেই অর্থ বা লক্ষ্য খুঁজে পেতে দেয় না

এই দ্বন্দ্ব থেকেই জন্ম নেয় এক ধরনের দোলাচল, যা আমাদের কখনো থামিয়ে দেয়, কখনো আবার তাড়িত করে

 

||   এই দ্বন্দ্ব নিয়ে দার্শনিকগণ কী বলেন ?

 

অনেক দার্শনিক এই জীবন নিয়ে চিন্তা করেছেন

Jean-Paul Sartre বলেন

  “Existence precedes essence.”

মানে, আমরা আগে এই পৃথিবীতে এসেছি, আর তারপর আমাদের জীবনের মানে আমরা নিজেরা তৈরি করি কেউ আগে থেকে আমাদের জন্য অর্থ ঠিক করে রাখেনি

তবে সমস্যা হয় যখন আমরা চারপাশে দেখিকিছুই নিশ্চিত নয়।  কোনো জবাব নেই, কোনো নিশ্চয়তা নেই

এই অবস্থাকে ফরাসি দার্শনিক Albert Camus বলেনAbsurd”—অর্থাৎ আমরা জীবনে মানে খুঁজি, কিন্তু পৃথিবী সেই প্রশ্নের জবাব দেয় না

Camus একটি পৌরাণিক গল্পের কথা বলেন

সিজিফাস নামের একজন মানুষকে দেবতা শাস্তি দিয়েছিল: সে সারাজীবন পাথর ঠেলে পাহাড়ের ওপরে তুলবে, আর সেই পাথর আবার গড়িয়ে নিচে পড়ে যাবে এই কাজ চলতেই থাকবে

Camus বলেন

  “One must imagine Sisyphus happy.”

কারণ সিজিফাস জানে কাজ শেষ হবে না, তবুও সে চেষ্টা চালিয়ে যায় এই চেষ্টার মধ্যেই তার শক্তি, তার স্বাধীনতা

এরপর আসেন Nietzsche

তিনি বলেন, মানুষের ভেতরে একধরনের শক্তি আছেWill to Power—

এই শক্তি তাকে বারবার ভেঙে পড়ে আবার গড়ে ওঠার সাহস দেয়

তিনি আরও বলেন

  “He who has a why to live can bear almost any how.”

যার জীবনে একটা উদ্দেশ্য থাকে, সে যেকোনো কষ্ট সহ্য করতে পারে


|| কিন্তু সব সময় কি আমরা এতটা সাহসী হতে পারি?

না, সব সময় পারি না আমরা ভয় পাই আমরা দ্বিধায় ভুগি ভবিষ্যতের অজানার মুখোমুখি হয়ে গেলে একধরনের ভয়, অস্থিরতা আমাদের ঘিরে ফেলে

এই অভিজ্ঞতাকে বলে Existential Anxiety

এটা ব্যাখ্যা করেছেন Søren Kierkegaard

তিনি বলেন, এই ভয় থেকে বের হওয়ার জন্য দরকার Leap of Faith—

অর্থাৎ অনেক সময় যুক্তি দিয়ে নয়, বিশ্বাসের উপর ভর করেই আমাদের সামনে এগোতে হয়

এই অনিশ্চয়তার মাঝেও আশার আলো দেন রুমি

যখন যুক্তি আর কথা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন রুমি আমাদের অন্য এক ভাষায় কথা বলেনপ্রেম, আত্মা আর আস্থার ভাষায়

তিনি বলেন:

  “Don’t grieve. Anything you lose comes round in another form.”

তুমি যা হারাও, তা অন্য কোনো রূপে তোমার কাছে ফিরে আসে 

তিনি আবার বলেন:

  “Try not to resist the changes that come your way. Let life live through you.”

জীবনের পরিবর্তনকে থামিয়ে দিও না বরং তাকে নিজের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে দাও

আর একটি কথায় তিনি আমাদের চোখ খুলে দেন

  “You were born with wings. Why prefer to crawl through life?”

এতে তিনি বলতে চেয়েছেন, তুমি জন্মেছো ডানাসহ, তবে কেন হামাগুড়ি দিয়ে জীবন কাটাবে?

রুমি মনে করিয়ে দেন

জীবনে যে কষ্ট আসে, যে ব্যথা অনুভব করি, সেটিই অনেক সময় আমাদের আত্মাকে জাগিয়ে তোলে

  “The wound is the place where the Light enters you.”

আমরা যতই কষ্ট পাই, সেই কষ্টই আমাদের শক্তি হয়ে উঠতে পারেযদি আমরা সেই আলোর পথ দেখতে পারি

 

||  তাহলে আমরা কী করব? হাল ছেড়ে দেব, না চেষ্টা করব?

 

জীবন যখন অনিশ্চিত, স্বল্পস্থায়ী, আর অনেক সময় অর্থহীন মনে হয়

তখন হয় আমরা সব ছেড়ে দিই, সময় নষ্ট করি, অলস থাকি

অথবা

আমরা সেই অনিশ্চয়তাকেই শক্তি হিসেবে নেই

জানতে পারি, জীবন যেমনই হোক, অর্থ নিজেই তৈরি করা যায়

আমরা যদি নিজের ভেতরে সৎ উদ্দেশ্য খুঁজি, প্রেম খুঁজি, আত্মার শান্তি খুঁজি, জগতের মানবিক আহ্বান শুনতে পারিতাহলে জীবন ধীরে ধীরে অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে কিছু করার সাধ জাগবে কিছু করার তাড়ণা থাকবে

 

|| শেষ কথা

 

জীবন সহজ নয়, এটা আমরা সবাই জানি

কিন্তু জীবন মানেই অর্থহীন না

এর প্রতিটি দ্বিধা, প্রতিটি দোলাচল, প্রতিটি ক্লান্তিসবই আমাদের প্রশ্ন করতে শেখায়, খুঁজতে শেখায়, গড়ে উঠতে শেখায়

আমরা মানুষএই কারণেই আমরা প্রশ্ন করি

আমরা জীবনকে ভালবাসি, চেষ্টা করি, আবার উঠি, আবার ভাঙি

এটাই তো জীবনের সৌন্দর্য

|

লেখা: মোঃ ফজলে রাব্বী

 

 

 

 

 

 

 

Popular Posts

দায়িত্বে উদাসীন নাগরিকের অধিকার সচেতনতার ঝুঁকি

দায়িত্বে উদাসীন নাগরিকের অধিকার সচেতনতার ঝুঁকি  মোঃ ফজলে রাব্বী

Md Fozla Rabby: Bangladesh's First Billionaire on Forbes' List

Md Fozla Rabby: Bangladesh's First Billionaire on Forbes' List Forbes Magazine's June 2023 edition unveils Md Fozla Rabby as Bangladesh's first billionaire, solidifying his place among the world's wealthiest individuals. With a staggering net worth of $23,690 crores USD, Rabby's ascent to success is a testament to his visionary leadership as the CEO of FOZPEDIA. Hailing from Jatiya Kabi Kazi Nazrul Islam University, Rabby's journey from humble beginnings to extraordinary wealth is an inspiration to aspiring entrepreneurs across the nation. His story epitomizes the power of education and unwavering determination, defying all odds and shattering barriers. Rabby's remarkable achievement resonates deeply within Bangladesh, fueling a sense of pride and optimism. As a trailblazer, he showcases the nation's potential as a hub for entrepreneurial prowess and economic growth. Expressing heartfelt gratitude, Rabby acknowledges the unwavering support of his tea...

নাদিয়া মোরাদের যে গল্পটা বিশ্ব-বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিল

ছবিতে : নাদিয়া মোরাদ  নাদিয়া মোরাদের যে গল্পটা বিশ্ব-বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিল  নাম নাদিয়া মুরাদ বাসে তাহা । সংক্ষেপে নাদিয়া মুরাদ ।  ১৯৯৩ সালে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় ছোট্ট গ্রাম কোজোতে যার  জন্ম ।  প্রথমদিকে তার জীবনটা আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো সুন্দর আর স্বাভাবিক ছিল । কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তার জীবনকে পুরোপুরি বদলে দেয়  । নাদিয়ার জীবনে কি এমন ঘটেছিল যা তাকে একটা সাধারণ মেয়ে থেকে একজন যৌনদাসিতে পরিণত করেছিল ।  তার জীবনে আর কি কি পরিবর্তন এসেছিল যার ফলে তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার   'নোবেল পুরস্কার' লাভ করেন!  প্রিয় পাঠক, আজ এ বিষয়েই কথা বলব ।  সময়টা ৩রা আগস্ট ২০১৪ । আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আই এস (ইসলামিক স্টেট) জাতীগত বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে ইরাকের সিন্জারে অবস্থিত কোজো গ্রামটিতে হামলা করে । এ পর্যন্ত তারা সেখানে ৭৩ বারেরও অধিক বার গণহত্যা চালায়  । শেষবার ২০১৪ সালে যখন হামলা করে তখন নাদিয়ার ছয় ভাই ও মা সে গণহত্যার শিকার হয় । সে গ্রামের অল্প বয়সী মেয়েদের তারা বন্দি করে নিয়ে যায়  । সেখানে ৬ হাজার ৭ শতাধিক মেয়ের মধ্যে নাদ...

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধিতে দ্বিমত কোথায়

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধিতে দ্বিমত কোথায়  চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার যে আন্দোলন চলছে সেটা আসলে কতটা যৌক্তিক । এ ব‍্যাপারটাতে আমার দ্বিমত আছে ।  কেন বয়সসীমা বাড়ানোটা ঠিক হবে না তার কয়েকটা কারণ বলি-  এক.  বয়সসীমা বাড়ালে বেকারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে কারণ ততদিনে আরো তিন/চারটা নতুন ব‍্যাচ চাকরির বাজারে প্রবেশ করবে । যা চাকরির  বাজারে সংকট তৈরী করবে ।  দুই.  এটা ফ্রেশ গ্রেজ‍্যুয়েটদের জন‍্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াবে । কারণ ইতঃপূর্বে চার/পাঁচটা ব‍্যাচ চাকরির জন‍্য নিজেদের তৈরী করে নিচ্ছে। সদ‍্য গ্রেজ‍্যুয়েশ শেষ করা একটা ছেলে, চার/পাঁচ বছর ধরে প্রিপারেশন নিতে থাকা একটা ছেলের থেকে পিছিয়ে থাকবে স্বাভাবিক । উপরন্তু প্রতিযোগীর সংখ‍্যাও দ্বিগুন থেকে তিনগুন বেড়ে যাবে ।  এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাধ‍্যমে যোগ‍্য প্রার্থী নির্বাচনে বৈষম্য তৈরি হবে।  তিন.  দেশে চাকরি প্রত‍্যাশীর তুলনায় কর্মসংস্থানের পরিমাণ অনেক কম।  সরকারি ক্ষেত্রে তা আরো নগণ্য । এক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি না করে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোটা তেমন ফলপ...