Skip to main content

অনার্স চতুর্থবর্ষের ভাইভা : আমার অভিজ্ঞতা

অঙ্কন : প্রসূন হালদার


অনার্স চতুর্থবর্ষের ভাইভা : আমার অভিজ্ঞতা

•••

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ‍্যাক‍াডেমিক জীবনে ভাইবা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট, যা প্রত‍্যেক স্টুডেন্টকে ফেস করতে হয় । আমি যদি আমার ডিপার্টমেন্টের কথা বলি তবে, আমাদের 'লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ‍্যা বিভাগের' চারবছর মেয়াদী স্নাতক প্রোগ্রামে মোট চারটি ভাইবা অনুষ্ঠিত হয় ,  যেখানে প্রত‍্যেক ভাইবার জন‍্য ২ ক্রেডিট (২×৪=৮) এবং  ৫০ মার্ক (৫০×৪=২০০) বরাদ্দ রয়েছে  । 

গতকাল, ২৯-০৯-২০২৪ তারিখে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের  অনার্স চতুর্থবর্ষের ভাইবা অনুষ্ঠিত হয় । যেহেতু আমি কোনো আহামরি ভাল স্টুডেন্ট না, তাই ভাইভা নিয়ে আমার তেমন উদ্বেগও ছিল না । এমন একটা অবস্থা যে, 'যা হওয়ার হবে, এত টেনশন নিয়ে কাজ নাই । যতোই প্রিপারেশ নেই না কেন, বোর্ডে গিয়ে ঠিকই  নার্ভাস হয়ে যাব।'  


যাহোক,  ভাইবা শেষ করলাম; এখন অভিজ্ঞতা শেয়ার করি । আমকে জিজ্ঞেস করা প্রশ্নগুলো পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনের প্রত‍্যেক স্টুডেন্ট এর জানা জরুরী  ।  


||


সালাম দিয়ে বোর্ডে প্রবেশ করলাম । স‍্যার বসতে বললেন । বসে এটেনডেন্স শীটে সিগন‍্যাচার করলাম । এরপরই জ্ঞান-যাচাই শুরু হয়- 


➤ পলিসি এক্টর বলতে কি বুঝেন? কয়েকটি উদাহরণ বলেন।

উঃ পলিসি এক্টর হচ্ছে কোনো ব‍্যক্তি, গোষ্ঠী, দল, প্রতিষ্টান এবং সংগঠন, যারা কোনো সমস‍্যা চিহ্নিতকরণ, সমস‍্যার সমাধান খুঁজে বের করা এবং কাঠামো তৈরী করা এবং সেসব সমাধানে তৈরীকৃত নীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত থাকেন । 

যেমন- সরকারের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, এক্সপার্ট, মিডিয়া ইত‍্যাদি ।


➤ সোশ‍্যাল এক্টর কারা 

উঃ আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে কিছু প্রাইভেট এক্টর রয়েছে, যেগুলো মূলত সোসাইটির পক্ষ থেকে কথা বলে । 

যেমন, পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের পরিবেশবাদী আইনজীবী সমিতি BELA (Bangladesh Environmental Lawyers Association ), এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন  ।


➤ কারা পলিসি ইম্পলিমেন্ট করেন? 

উঃ আমরা সাধারণত জানি পলিসি বাস্তবায়নের জন‍্য সরকারের শাসন-বিভাগ সরাসরি জড়িত । তবে সরকারের বিভিন্ন রেগুলেটরি  প্রতিষ্ঠান এবং পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের মাধ‍্যমেও পলিসি বাস্তবায়ন করা হয় । সরকার NGO এর মাধ‍্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করার মাধ্যমে পলিসি বাস্তবায়ন করে থাকে, উদাহরণস্বরূপ ASK (Ain o Salish Kendra) এর কথা বলা যায়। আবার অনেক নন-স্টেট এক্টর রয়েছে, যেগুলো পরোক্ষভাবে সরকারের নীতি বাস্তবায়নে সহায়তা করে থাকে । 


➤ পলিসি ফর্মুলেশনে মিডিয়ার ভুমিকা কী বলেন!

উঃ মিডিয়াকে একটা দেশের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে, যারা জনমত গঠন, জনমত যাচাই এবং সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের যৌক্তিক সমালোচনা করার মাধ‍্যমে সরকারকে চাপে রাখে এবং সরকারের প্রত‍্যেক পদক্ষেপে নজরদারীর করে । এর ফলে সরকার নীতিমালা গঠনে প্রভাবিত হয় ।


➤ লাইকার্ট স্কেল কি? কখন ব‍্যাবহার করা হয়? 

উঃ লাইকার্ট স্কেল হলো রেনসিস লাইকার্ট কর্তৃক প্রদত্ত অপিনিয়ন মেজার্মেন্ট স্কেল, যার মাধ‍্যমে একজন ব‍্যক্তির মতামত, সন্তুষ্ট ইত‍্যাদি পাঁচটি স্কেল বা স্তরে প্রকাশ করা হয় । যেমন, কোনো সেবা গ্রহণের সন্তুষ্টির মাত্রা প্রকাশ করতে একজন ব‍্যক্তি বলতে পারে, সে 

ভীষণ সন্তুষ্ট,

সন্তুষ্ট 

মতামত নেই

অসন্তুষ্ট অথবা

ভীষণ অসন্তুষ্ট ! 


➤ চারটি মেজার্মেন্ট লেভেল বলেন ।

উঃ সরি স‍্যার,এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না । 

(ম‍্যাম মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, তারপর বললাম । তবে মনে হলো উত্তর যথেষ্ট হয় নি। )


এক্সটার্নাল স‍্যার 

➤ পার্টিসিপেটরি গভর্নমেন্ট এবং ডেমোক্রেটিক গভর্নমেন্ট বলতে কি বুঝেন, এই দুইটির মধ‍্যে কি কোনো পার্থক্য আছে?

উঃ ডেমোক্রেটিক গভর্মেন্টকেই সাধারণত পার্টিসিপেটরি গভর্নমেন্ট বলা হয় থাকে । তবে এদুটির মধ‍্যে একটি মৌলিক পার্থক্য হলো ডেমোক্রেটিক গভর্নমেন্ট গঠিত হওয়ার জন‍্য নির্বাচন প্রধান শর্ত, অন‍্যদিকে পার্টিসিপেটরি গভর্নমেন্ট এ জনগণের প্রত‍্যক্ষ সমর্থন থাকবে তবে তা নির্বাচন এর মাধ্যমে নয়। 


➤ বর্তমান সরকারব‍্যাবস্থাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

উঃ স‍্যার, বর্তমান সরকার ব‍্যাবস্থাকে বিপ্লবোত্তর সরকার বলা হয় । পূর্ববর্তী সরকারের অপশাসন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে জনগণের প্রতিবাদ আর রুখে দাড়ানোর ফসল , যে সরকারের প্রধান লক্ষ্য জনগণের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং সর্বস্তরে সুশাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া ।

➤ এই সরকার ব‍্যাবস্থা ডেমোক্রেটিক নাকি পার্টিসিপেটরি?

উঃ যেহেতু প্রত‍্যক্ষ নির্বাচন ছাড়া এ সরকার গঠিত হয়েছে তাই এ সরকার ব‍্যাবস্থাকে ডেমোক্রেটিক বলার সুযোগ নেই । আবার পুরোপুরি পার্টিসিপেটরিও বলা যায় না । 

কারণ, এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ব‍্যাতিত অন‍্যান‍্য উপদেষ্টাগণ নিজ নিজে এক্সপার্টাইজ আর নজেলের কারণে সিলেক্টেড হয়েছে, যেখানে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই । 

তবে এ সরকারের উপর জনগণের অধিকার রয়েছে, জনগণ চাইলে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ পরিবর্তন করতে বাধ‍্য থাকবে ।  উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,  ড.এম. সাখাওয়াত হোসেন স‍্যারকে প্রথমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদবী দেওয়া হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে জনগণের অসন্তোষের কারণে তাকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে শিফট করা হয় । আবার, জন-অসন্তোষের মুখে শিক্ষা সংস্কারের জন‍্য গঠিত কমিটিও বাতিল করা হয় । 


➤ সংবিধানে তো এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে কোনো প্রভিশন নেই, তাহলে এই সরকারের বৈধতা কী?

উঃ জ্বী ম‍্যাম, আমাদের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে কিছু বলা নেই । তবে 'ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি' অনুসারে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেওয়ার জন‍্য এই সরকার গঠিত হয়েছে ।  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদে জনগণকে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার উৎস বলার মাধ‍্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে । যেহেতু জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস তাই জনকল্যাণে জনগণ যা বলবে, তা ই আইন । 

তবে পরবর্তীতে যখন গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হবে তখন সংবিধান এমেন্ডমেন্ট এর মাধ‍্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা দেওয়া হবে ।


➤ দেশের এই পরিবর্তনকে কোন প্রকারের চেঞ্জ বলা যেতে পারে?

উঃ যেহেতো বিপ্লবের মাধ‍্যমে আমাদের দেশের সরকার কাঠামোয় একটা মৌলিক  এই পরিবর্তন এসেছে, তাই এটিকে র‍্যাডিক‍াল চেঞ্জ বলা যায় ।

➤ রিফর্ম ও র‍্যাডিক‍্যাল চেঞ্জ এর মধ‍্যে পার্থক্য কী?

উঃ রিফর্ম হচ্ছে এক্সিসটিং কোনো নীতি বা অবস্থাকে পরিবর্ধণ, পরিমার্জন ও সংযোজন - সংশোধন করা । অন‍্যদিকে র‍্যাডিক‍াল চেঞ্জ হলো একটি অবস্থার আমূল পরিবর্তন ।

➤ পলিসি ইম্পলিমেন্টেশনে টপ-ডাউন ও বটম আপ এপ্রোচ বলতে কী বুঝ?

উঃ পলিসি বাস্তবায়নে টপ-ডাউন এপ্রোচ হচ্ছে, কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত কোনো পলিসি লোকাল লেভেলের ব‍্যুরোক্রেটদের দ্বারা বাস্তবায়িত হওয়া ।  এ প্রক্রিয়ায় সেন্ট্রাল লেভেলকে পলিসি ফর্মোলেটর এবং সেন্ট্রালের বাইরের স্টেজকে ইম্পলিমেন্টর বলা হয় । এ প্রক্রিয়ায় লোকাল অথরিটির মতামতের কোনো মূল‍্য থাকে না।  

অন‍্যদিকে, বটম-আপ এপ্রোচে লোকাল লেভেলের অথরিটি স্থানীয় চাহিদা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী পলিসি মুডিফাই করার অধিকার রাখে । এ প্রক্রিয়ায় পলিসি আউটকাম পরিমাপ করা একটু কঠিন, কারণ এক্ষেত্রে পলিসির নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন নয় বরং  পলিসি আউটকাম নির্ভর করে এই পলিসি কতটা জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পেরেছে তার উপর । 

➤ আচ্ছা, ধন্যবাদ, আপনি আসতে পারেন।

-ধন‍্যবাদ স‍্যার, আসসালামু আলাইকুম । 


||


এই ছিল আমার ভাইভা, জানিনা কেমন উত্তর করতে  পেরেছি ।  তারপরও শুকরিয়া,  এর মাধ‍্যমে অনার্স এর এ‍্যাক‍াডেমিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে । আগামী কয়েকদিন রেস্ট নিয়ে আবার থিসিস শুরু করতে হবে । 


সবশেষে, এই লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন‍্য আপনাকেও ধন্যবাদ; 

আমার এই ছোট্ট প্লাটফর্মের সঙ্গেই থাকুন । 



•••

মোঃ ফজলে রাব্বী

লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ‍্যা বিভাগ,

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।



Popular Posts

যে আকুতি প্রস্থানের আগে

  বটতলা জামে মসজিদ, ত্রিশাল

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিপথ : উন্নয়ন সম্ভাবনার নানাদিক

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিপথ : উন্নয়ন সম্ভাবনার নানাদিক মোঃ ফজলে রাব্বী

সমস‍্যাটা আসলে কোথায়?

সমস‍্যাটা আসলে কোথায়?  একজন স্টুডেন্ট তার ক‍্যারিয়ার কোথায় গড়তে চায় সেটা কেন কেউ চ‍্যুজ করে দিবে? সে গভমেন্ট জব করবে, উদ‍্যোক্তা হবে, ব‍্যাবসা করবে নাকি অন‍্য কিছু করবে, সেটা তার ব‍্যক্তিগত বিষয় । সে তার সারাউন্ডিংস, অপচ‍্যুনিটি-কস্ট, প‍্যাশন, সামাজিক ব‍‍্যাপার-স‍্যাপার সবকিছু বিবেচনা করে সে সেটা ডিসাইড করবে ।  অথরিটি বা স্টেকহোল্ডার যারা, তাদের কাজ হচ্ছে তার জার্নিতে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখা, তার লাইফের ডিসিশন নেওয়া না । দুইজন মানুষের মাছ খাওয়ার চাহিদা থাকতেই পারে,  এখন সে মাছ নিজে নদী থেকে ধরে নিয়ে আসবে নাকি বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসবে সেটা কিসের উপর নির্ভর করে আপনি জানেন না ।  আপনারা কেন এসব কথা বলছেন সবাই জানি। দেশে গভমেন্ট জব অপচ‍্যুনিটি পর্যাপ্ত না, সেজন‍্য স্টুডেন্টদের দায়ী করবেন? সবাইকে পড়াশুনা করার দরকার নাই,  গ্র‍্যাজুয়েট হওয়ার দরকার নাই, এগুলো দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা। কারো এলাকায় নদী/পুকুর নাই, নদী/পুকুরে ডুবে মরার রিস্ক নাই । তাই বলে সে সাতার শিখবে না?  বাংলাদেশে বসে ইউরোপের প্রেক্ষাপট কল্পনা করে কথা বললে হবে না। এর'চে বরং সমস‍্যা যেখানে, সে বিষয় নিয়ে কথা বলেন । পর্যাপ্ত জব অ