Skip to main content

অসাম‍্যের সমাজ হইতে আমাদের মুক্তি কখন

অসাম‍্যের সমাজ হইতে আমাদের মুক্তি কখন


"Public policy typically reflects elite values; the elite interests take priority while making decisions."

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে যে কয়টা পলিসি নিয়ে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করলে এই কথাগুলো আপাত দৃষ্টিতে অস্বীকার করার উপায় নাই । পাবলিক পলিসি যে সবসময় ম‍াস পিপলের স্বার্থের সাথে এলাইন করে না, ব‍্যাপারটা বোঝার জন‍্য আপনাকে বুদ্ধিজীবী হওয়া লাগবে না, নরমাল সেন্সেই ধরতে পারবেন । 

আইন তৈরির পেছনে যে কয়টা কারণ রয়েছে তার মধ‍্যে  'জনস্বার্থ রক্ষা ও স্বাধীনতা উপভোগ করার  উপায়'  হচ্ছে অন‍্যতম ।  এইটা মূলত বইয়ের কথা । এর বাইরে 'পাওয়ার প্র‍েকটিস করা এবং নানা ধরনের অন‍্যায় ও অনায‍্য কর্মের দায়ভার থেকে এলিটদের মুক্তির হাতিয়ার' হিসেবে ব‍্যাবহার করার বিষয়টিও রয়েছে । 

স্থানীয় ভাষায় একটা কথা আছে,  'মনিব যদি তার দাসদেরকে সব সুযোগ -সুবিধা দিয়ে দেয় তাহলে দাসরা নিজেদের মনিব ভাবতে শুরু করবে ।'   কিন্তু এটা তো হতে দেওয়া যায় না । আর তখনই মালিক পক্ষের লোকেরা তাদের ক্ষমতা বোঝানোর জন‍্য আইন তৈরি করেন । দাসরা যে তাদের মুখাপেক্ষী এবং তাদের দয়ায় বেঁচে থাকে এইটা বোঝানোর জন‍্য, সবকিছু জানার পরও ন‍্যয‍্য সুযোগ-সুবিধা দেন না । 

যাহোক,  জনকল্যাণমূলক, স্বাধীন ও সাম‍্যবাদী দেশ হিসেবে আমরা এই বিষয়গুলো ভাবতে চাই না । অথচ তখনই বিচারবিভাগ থেকে স্টেটমেন্ট আসে 'আন্দোলন দেখে রায় পরিবর্তন হয়না বা আইন তৈরি হয় না। ' এখন প্রশ্ন থাকে, ' তবে আইন কী দেখে তৈরী হয়? কোনো আইন যদি জনস্বার্থ বিরোধী হয়, আন্দোলন তো হবেই  ।  এসব আইন পরিবর্তনে দোষ কোথায়? নাকি এর পিছনে অন‍্যকোনো স্বার্থ জড়িয়ে আছে?  নাকি বৃহৎ স্বার্থকে চাপিয়ে,  ব‍্যক্তি স্বার্থ বা গুষ্টি-স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে?  

কোটা বহাল রাখার বিষয়ে যে প্রস্তাব রয়েছে তা কেন যথার্থ, এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ্য করা প্রয়োজন । কেন একটা বিশেষ গোষ্ঠীকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা খোলাসা না করলে আন্দোলন হচ্ছে এবং হবেই ।   

আপনাদের চোখে যাদেরকে অনগ্রসর বা সুবিধা বঞ্চিত ভাবেন,  সেভাবে ভাবলে দেশের আশি ভাগ মানুষ এখনো সুবিধা বঞ্চিত । 

দেশের মোট সম্পদের প্রায় ৭০ ভাগই ব‍্যাবসায়ী, আমলা আর পলিটিশিয়ানদের দখলে । তারা দুইদিন পরপর কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যাচ্ছেন, কোটি কোটি টাকা ব‍্যাংক ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না ।  লাখ লাখ টাকা ট‍্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছেন ।  অন‍্যের সম্পদ দখল করে টাকার পাহাড় গড়ছেন ।  সে হিসেবে তাদের ছেলেমেয়ে যে সুবিধা পাচ্ছে, দেশের কয়টা ছেলেমেয়ে এর ধারেকাছে আছে । 

খাতা কলমে মাথাপিছু আয় আছে ঠিকই অথচ ভ‍্যাট আর ট‍্যাক্স দিতে দিতে,  দিন আনতে পান্তা ফুরায় এমন সংসার থেকে এখনো লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে ।  খেয়ে না খেয়ে, টিউশন করে, পাবলিক বাসে ঝুলে চলাফেরা করা ছেলেগুলো কি এসি কারে চলা ছেলে মেয়েদের সমান সুবিধা পায়?   তার উপর অস্বচ্ছ নিয়োগ পদ্ধতি,  নেপোটিজমের স্বীকার হওয়ার মতো বিষয়গুলো তো এখনো মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আছে ।  এইসব ভাবলে  সবাইকেই কোটা দিতে হবে । দিতে পারবেন?  

এখনো হাজারো পথ শিশু পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেনা,  হাজারো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কর্মের সুযোগের অভাবে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি করে,  এখনো অনেক উপজাতী, বানের জলে ভাসা হাজার মানুষ আছে যারা মাথাগুজার ঠাই পাচ্ছে না , তাদের কোটা কে দেবে ?  

কাদের জন‍্য কোটার ব‍্যাবস্থা করেছেন, সাম‍্যের নামে অসাম‍্যের খড়গ কৃপাণ এখনো চাপিয়ে দিচ্ছেন কিনা ভেবে দেখেছেন?  

কোটা সব সময় সাম‍্য নিশ্চিত করতে পারে না ।  

কোটার মাধ‍্যমে সর্বোচ্চ পড়াশোনার ক্ষেত্র তৈরি করা যায়, মূলধারায় সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করতে এটি তাদের সাহায্য করবে ।  তবে একদম চাকরিতে কোটা রাখাটা পুরোপুরি অযৌক্তিক । 

একটা রেস এ আপনি একজনকে সর্বোচ্চ তার পথ দেখিয়ে দিতে পারেন,  সাইডলাইনে থেকে তাদের জন‍্য হাততালি দিতে পারেন। কিন্তূ হাত ধরে একেবারে গন্তব্যস্থলে পৌছে দিতে পারেন না  । এটা অন‍্যায় । এটা অন‍্য প্রতিযোগিরা মানবে না ।  

অসাম‍্যের জাহান্নম হইতে মুক্তির অর্ধশতক পেরিয়ে যখন নতুন উদ্দীপনা নিয়ে 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গঠনের  স্বপ্ন দেখছি,  তখন বিগত পঞ্চাশ বছরে সাম‍্যের সমাজ গঠনে আপনারা কী করেছেন তা খতিয়ে দেখার বিষয়টি সয়ংক্রিয়ভাবে সামনে চলে আসে  । 

আপনারা যা করছেন, তা সাম‍্য ও অসাম‍্যের দোলাচলে তলাবিহীন ঝুড়িটি আজ কতটা পরিপক্ব তা নিয়ে মনে সন্দেহ তৈরি করে  । 

© মোঃ ফজলে রাব্বী

Popular Posts

অনার্স চতুর্থবর্ষের ভাইভা : আমার অভিজ্ঞতা

অঙ্কন : প্রসূন হালদার

যে আকুতি প্রস্থানের আগে

  বটতলা জামে মসজিদ, ত্রিশাল

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিপথ : উন্নয়ন সম্ভাবনার নানাদিক

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিপথ : উন্নয়ন সম্ভাবনার নানাদিক মোঃ ফজলে রাব্বী

সমস‍্যাটা আসলে কোথায়?

সমস‍্যাটা আসলে কোথায়?  একজন স্টুডেন্ট তার ক‍্যারিয়ার কোথায় গড়তে চায় সেটা কেন কেউ চ‍্যুজ করে দিবে? সে গভমেন্ট জব করবে, উদ‍্যোক্তা হবে, ব‍্যাবসা করবে নাকি অন‍্য কিছু করবে, সেটা তার ব‍্যক্তিগত বিষয় । সে তার সারাউন্ডিংস, অপচ‍্যুনিটি-কস্ট, প‍্যাশন, সামাজিক ব‍‍্যাপার-স‍্যাপার সবকিছু বিবেচনা করে সে সেটা ডিসাইড করবে ।  অথরিটি বা স্টেকহোল্ডার যারা, তাদের কাজ হচ্ছে তার জার্নিতে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখা, তার লাইফের ডিসিশন নেওয়া না । দুইজন মানুষের মাছ খাওয়ার চাহিদা থাকতেই পারে,  এখন সে মাছ নিজে নদী থেকে ধরে নিয়ে আসবে নাকি বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসবে সেটা কিসের উপর নির্ভর করে আপনি জানেন না ।  আপনারা কেন এসব কথা বলছেন সবাই জানি। দেশে গভমেন্ট জব অপচ‍্যুনিটি পর্যাপ্ত না, সেজন‍্য স্টুডেন্টদের দায়ী করবেন? সবাইকে পড়াশুনা করার দরকার নাই,  গ্র‍্যাজুয়েট হওয়ার দরকার নাই, এগুলো দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা। কারো এলাকায় নদী/পুকুর নাই, নদী/পুকুরে ডুবে মরার রিস্ক নাই । তাই বলে সে সাতার শিখবে না?  বাংলাদেশে বসে ইউরোপের প্রেক্ষাপট কল্পনা করে কথা বললে হবে না। এর'চে বরং সমস‍্যা যেখানে, সে বিষয় নিয়ে কথা বলেন । পর্যাপ্ত জব অ