Skip to main content

বিদ‍্যুৎ বিভ্রাট : সামাজিক বৈষম্যের চিত্র

 

বিদ‍্যুৎ বিভ্রাট : সামাজিক বৈষম্যের চিত্র



তারাবি পড়তেছি।  কারেন্ট না থাকায়  গরমে সবার কাহিল অবস্থা।  প্রতি দুই রাকআত শেষ করে সবাই হাঁসফাঁস করে। 

এক সময় এক মুরব্বী অসহিষ্ণু হয়ে বলেই ফেলে "দিনে  ছব্বিশ ঘন্টার মধ‍্যে বিশ ঘন্টাই যদি কারেন্ট না থাকে তাইলে এই শাউ/য়ার কারেন্ট দিয়া কি করমু।" 

পিছন থেকে আমার বয়সি কয়েকটা পু*টা পোলাপান উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলে অন‍্য মুসল্লিরা তাদের থামিয়ে নতুন রাকাআত শুরু করেন । 

আমি বাকি নামাজে চাচার এই কথাটাই ভাবতে থাকি।  আসলেই তো, এই শাউ/য়ার কারেন্ট দিয়ে কি করমু । তাড়াবির সময় থাকে না, সাহরি আর  ইফতারের টাইমেও থাকে না, ফোন জ্বালিয়ে খাওয়া দাওয়া করা লাগে ।  তাহলে এই থাকা আর না থাকার পার্থক্য কী?  

তারাবি শেষে ঐ চাচারে জিগাইলাম, 'চাচা, যখন কারেন্ট ছিল না, তখন গরম ক‍্যামনে সইহ‍্য করতেন?

'তখন আরো সুখে ছিলাম,  সারাদিন বাইরে উদাম হয়া কাম করতাম,  বিকালে টিপকলের ঠান্ডা পানি দিয়া গোসল করতাম। এখন সারাদিন কাম করি ঠিকই কিন্তু টিপকলের পানি উঠে না, মোটর দিছি, কারেন্টের কারনে সময় মতো ছাড়ন যায় না। যদি ছব্বিশ মিনিট ফ‍্যানের বাতাস খাই,  বিল ধরায়ে দেয় চৌদ্দশ।  তোমার চাচিরও বয়স হইছে, হাতপাখা দিয়েও বাতাস করতো পারে না। '

চাচার আসলেই কষ্ট । বললাম, 'ছেলেরা তো শহরে থাকে, তাদের বাসায় চলে যান, ওখানে ফ‍্যান -এসি সব আছে! কারেন্টও যায় না'। 

'আরে ধুর ব‍্যাডা, এসির বাতাস খাওনের লাইগা শহরে যাওন লাগবো, ক‍্যান? গ্রামে এলাকায় আছি, এইনে যদি ঠিকঠাক লাইন দেয় তাইলে এইনেও এসি লাগানো যাইব।  শহরে আর গ্রামের মধ‍্যে দুই নীতি ক‍্যান। ' 

আমি বললাম, 'অফিস-আদালত,শিল্প কারখানা সব তো শহরে, এজন‍্য'। 

'তাতে কী, আমি ট‍্যাক্স দেই না? এইবার  দুইশো মণ ধান করছি,  পঞ্চাশ মণ রাইখা বাকিগুলো বেইচা দিছি। এই ধান কই গেলো, শহরে গেলো।  গোলামের ফুতেরা শহরে বইসা আমার ক্ষেতের চিকন চালের ভাত খায়,  তিরিশ কাটা জমিনে তিরিশ হাজার কইরা ট্রাক্স দেই,  এই টাকায় তারা রাস্তা-ঘাট, মেট্রোরেল করে, হাসপাতাল করে,  বড় বড় বিল্ডিং কইরা ঐখানে বইসা আরাম থাকে। আর গ্রামে আমি এইগুলার কিছু পাই না । রাস্তাঘাট ঠিকঠাক নাই, অসুখ হইলেও ডাক্তার থাকে শহরে । এই চার -পাঁচ বছর আগে কারেন্ট আইছে,  এখন এইটাও থাকে না ঠিকঠাক । 

ওরা গরিবরে সাত-পাঁচ বুঝায়ে, কয় পয়সা বেতন দিয়া ফ‍্যাক্টরি চালায়, ঐ টাকা নিজেরাই ভোগ করে।  দেশের টাকা বাইরে নিয়া তো যায় ই, বছরের পর বছর সরকাররে ট‍্যাক্স দেয় না, যে বোঝা গরিবদের উপরে আইসা পরে । ক‍্যান, উন্নয়ন কি খালি ঐ শহরের লাইগা? আমরা ভাইসা আইছি? এই অজুহাত আর কয়দিন? ' আমি আর কিছু বলি না । উনারে ক্ষেপিয়ে লাভ নাই। 

ভাবি এই বিষয়টা নিয়ে আসলেই ভেবে দেখা উচিত।  আমরা কেন এখনো নগর কেন্দ্রীক উন্নয়নের দিকেই তাকিয়ে আছি ।  লক্ষী তার  সব  ধন-ভাণ্ডার কেন এক ঘাটেই ঢেলে দেন। 

সামাজিক অন্তর্ভুক্তি মূলক উন্নয়নের স্লোগান  কি এই প্রশ্নের দায় এড়াতে পারে?

Popular Posts

সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও দার্শনিক ব্যাখ্যা: যুক্তি, দর্শন ও ইসলামের মিলনবিন্দু

  সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও দার্শনিক ব্যাখ্যা: যুক্তি, দর্শন ও ইসলামের মিলনবিন্দু ভূমিকা: সৌন্দর্যের আড়ালে লুকানো সত্তা প্রতিদিন আমরা দেখি—সূর্য নিখুঁত নিয়মে উদিত হয়, সন্ধ্যায় নীরবে অস্ত যায়। শীতের কুয়াশা শেষে আসে বসন্তের ফুলেল সৌরভ, তারপর বৃষ্টি ছুঁয়ে যায় পল্লীপ্রকৃতিকে। নদী তার নিজস্ব গতিপথ ধরে ছুটে চলে, চাঁদ নির্দিষ্ট নিয়মে রূপ বদলায়, নক্ষত্ররা রাতের আকাশে শোভা বাড়ায়— এ এক অপার সৌন্দর্যের, এক অসাধারণ শৃঙ্খলার জগৎ! কিন্তু এই সৌন্দর্য আর শৃঙ্খলা কি কেবল কাকতালীয়? এত নিখুঁত হিসাব, এত ছন্দময় নিয়ম—এসবের পেছনে কি কেউ নেই? কারো পরিকল্পনা নেই? প্রকৃতির প্রতি যতই গভীর দৃষ্টি দিই, ততই যেন মনে প্রশ্ন জাগে— কে এই অসীম কুশলী কারিগর? তাঁকে তো আমরা চোখে দেখি না, তাঁর কোনো গড়ন নেই, রঙ নেই, আকার নেই। তবে কি এই দেখার অক্ষমতাই আমাদের মনে সন্দেহ জাগায়? তাঁর অস্তিত্ব কি কেবল বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে, নাকি যুক্তির পথেও আমরা তাঁকে অনুভব করতে পারি? এই প্রশ্নগুলোই আজ আমাদের এই চিন্তার যাত্রার সূচনা করে। যেখানে আমরা সন্ধান করব সেই যুক্তির, যা কেবল বিশ্বাসে নয়, যুক্তিবাদী মনেও সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা ক...

অনার্স চতুর্থবর্ষের ভাইভা : আমার অভিজ্ঞতা

অঙ্কন : প্রসূন হালদার